নিজস্ব প্রতিবেদক

০১ জুলাই, ২০২৪ ১৮:০৪

শিক্ষকদের আন্দোলনে অচল শাবিপ্রবি ও সিকৃবি

সার্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলসজ তিনদফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ওিসিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) শিক্ষকরা।

সোমবার থেকে শুরু হওয়া শিক্ষকদের এই কর্মবিরতিতে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালর দুটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও। ফলে অনেকটাই অচল হয়ে পড়েছে শাবিপ্রবি ও সিকৃবি। সোমবার এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি।

সোমবার সকাল থেকে কর্মবিরতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শাবিপ্রবি শিক্ষকরা।

শিক্ষকদের দাবির মধ্যে রয়েছে- সার্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তি এবং স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তন।

এর আগে রোববার সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়।

অন্যদিকে বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশন কর্তৃক ঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী সর্বজনীন পেনশন বিধিমালার প্রত্যয় স্কিম হতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে সোমবার সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন শাবিপ্রবি কর্মকর্তরা।

শাবিপ্রবির ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আজিজ চৌধুরী বলেন,প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে আমরা তিনমাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছি। এতোদিন আমরা ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ করিনি। কিন্তু আমাদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আমলে নেননি। এখন আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে নেমেছি।

কর্মবিরতিতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকদের সবসময়ই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হয়। প্রত্যয় স্কিম চাপিয়ে দিয়ে আমাদের সাথে যে অন্যায় করা হচ্ছে তার প্রতিবাদ অবশ্যই করা উচিত। এখন সরকার যত তাড়াতাড়ি আমাদের দাবি মেনে নেবেন শিক্ষার্থীদের তত কম ক্ষতি হবে।

এদিকে, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা প্রজ্ঞাপন দ্রুত প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অভিন্ন নীতিমালা বাতিল ও নবম স্কেল প্রদানের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে সহায়ক কর্মচারী সমিতি, সহায়ক পরিবহন কর্মচারী সমিতি ও শাবিপ্রবি কর্মচারী ইউনিয়ন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ।

সিকৃবি: একই দাবিতে সোমবার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে সর্বাত্নক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।

সকালে কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে অনুষ্ঠিত কর্মবিরতি পালনকালে সমাবেশে অনুষ্ঠানে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. মুহাম্মদ আল মামুনের সঞ্চালনায় এবং সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ছফি উল্লাহ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালার প্রজ্ঞাপন থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অন্তর্ভুক্তি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার পরিষদের উদ্যোগেও সোমবার কর্মবিরতির ডাক দিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে  অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।

অফিসার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. আফরাদুল ইসলামের সঞ্চালনায় এবং সভাপতি মোহাম্মদ ছায়াদ মিয়ার সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে অফিসার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

এ সময় বক্তারা বলেন, বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশন পান, ৫% হারে ইনক্রিমেন্ট পাওয়া যায়, এছাড়া এককালীন বড় অঙ্কের অর্থ পাওয়া গেলেও চাপিয়ে দেয়া প্রত্যয় স্কিমে সব কিছু বাদ দেয়া হয়েছে।

সিকৃবি শিক্ষক সমিতি সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ ছফি উল্লাহ ভূঞা বলেন, ‘আমরা আশা করি সরকার অনতিবিলম্বে এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে, যাতে আমরা ক্লাসে ফিরে যেতে পারি। অন্যথায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।

তিনি আরও বলেন প্রত্যয় স্কিমের ফলে মেধাবীরা আর শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হবে না। প্রত্যয় স্কিম হলো জাতিকে মেধাশূন্য করার একটা গভীর ষড়যন্ত্র। মেধাশূন্য জাতিকে দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া যাবে না। জাতিকে সুপরিকল্পিত ভাবে মেধাশূন্য করার পাঁয়তারা চলছে।

প্রসঙ্গত, প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন তিন মাসেরও অধিক সময় ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, প্রতীকী কর্মবিরতি, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।

গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হয় এবং ৩০ জুন থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত