সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ জুন, ২০২৪ ১০:৫৫

পরস্পরকে রক্ষার প্রতিরক্ষা চুক্তি কিম-পুতিনের

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বুধবার পারস্পরিক প্রতিরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।

এনবিসি নিউজ জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া পশ্চিমাদের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের মুখোমুখি। এ অবস্থায় দুই দেশ বাইরের যেকোনো আক্রমণের সময় একে অপরকে সাহায্যের উদ্দেশ্যে পিয়ংইয়ংয়ে পারস্পরিক প্রতিরক্ষার প্রতিশ্রুতি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞার কারণে দুই দেশ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাই দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তির বিকল্প নেই। ধারণা করা হচ্ছে, এই চুক্তির ফলে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য মস্কোর সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এমন যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহের বিনিময়ে পিয়ংইয়ংয়ে সামরিক প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রক্রিয়া প্রসারিত করতে পারে রাশিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এনবিসি নিউজকে বলেছেন, এ ধরনের চুক্তি উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য তা হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।

পুতিন ২৪ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বুধবার উত্তর কোরিয়ায সফরে আসেন। তিনি ঠিক এমন সময়ে সফর করছেন যখন ক্রেমলিনের সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের পূর্ব ও উত্তরে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে কিয়েভের প্রতিরক্ষার জন্য দেশটি তার মিত্রদের কাছ থেকে জোরালো প্রতিশ্রুতি পাচ্ছে।

কিমের দাদা ও উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতার নামে মধ্য পিয়ংইয়ংয়ের কিম ইল সুং স্কয়ারে এক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মধ্যাহ্নে পৌঁছান পুতিন।

জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেশটির সাধারণ নাগরিক ও শিশুরা পুতিন ‌এবং কিমকেকে অভ্যর্থনা জানায়। পরে কিম ও পুতিন কুমসুসান প্রাসাদে শীর্ষ বৈঠকের জন্য রওনা হন।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানায়, আলোচনা শুরুর আগে পুতিন এক বক্তব্যে বলেন, ‘ইউক্রেনসহ রুশ নীতির প্রতি আপনার ধারাবাহিক ও অবিচল সমর্থনের আমরা ভূয়সী প্রশংসা করি।’

তিনি ইউক্রেনের বিষয়ে পিয়ংইয়ংয়ের অবস্থানকে ‘তার সার্বভৌম নীতির আরেকটি প্রমাণ’ হিসেবে অভিহিত করেন।

পুতিন এ সময় দাবি করেন, রাশিয়া দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের চাপিয়ে দেয়া সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।

অস্ত্র পরীক্ষা ত্বরান্বিত করা ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা উস্কে দেয়ার জন্য দায়ী কিম বুধবার ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে- কিম তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘রাশিয়া-উত্তর কোরিয়া সম্পর্ক সমৃদ্ধির নতুন যুগে প্রবেশ করছে এবং উত্তর কোরিয়া নিঃশর্তভাবে রাশিয়ার সব নীতিকে সমর্থন করবে।

‘উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক মৈত্রীর নতুন স্তরে পৌঁছেছে।’

কিম জং উন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মস্কোর সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের পর উত্তর কোরিয়া তার দেশ বা রাশিয়ার মুখোমুখি হওয়া ঘটনা বা যুদ্ধের ক্ষেত্রে বিনা দ্বিধায় জবাব দেবে।’

তবে এ ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া কী হবে বা তিনি ঘটনা বা যুদ্ধ হিসেবে কী বোঝাতে চেয়েছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি।

উত্তর কোরিয়ার নেতা বলেন, ‘আমাদের দেশগুলোর মুখোমুখি হওয়া বিভিন্ন ঘটনা বা যুদ্ধের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাড়া দেয়ার দায়িত্ব পালনে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা, দ্বিধা বা সিদ্ধান্তে কোনো পার্থক্য করবে না।’

দুই দেশের মধ্যে নতুন চুক্তি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ ও প্রতিরক্ষামূলক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই চুক্তি একটি বহু মেরুর বিশ্ব সৃষ্টিকে ত্বরান্বিত করবে যেখানে কোনো একক দেশ আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে না।’

দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে আলোচনা হয়। কিম ও পুতিনের মধ্যে সামনাসামনি অতিরিক্ত প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আলোচনা চলে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।

এর আগে বুধবার ভোরে পুতিন পিয়ংইয়ং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছলে কিম তাকে স্বাগত জানান। এ সময় দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান পরস্পরের সঙ্গে করমর্দন করেন এবং জড়িয়ে ধরেন। এরপর তিনি পুতিনের সঙ্গে লিমুজিনে করে কুমসুসান রাষ্ট্রীয় গেস্ট হাউসে যান। সফরকালে পুতিন এখানেই অবস্থান করছেন।

পুতিন বুধবার এই কৌশলগত চুক্তিকে একটি ‘মৌলিক দলিল’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, এই চুক্তি রাশিয়া ও নর্থ কোরিয়ার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ককে একটি শক্তিশালী রূপ দেবে।

হনুলুলুর এশিয়া-প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের অধ্যাপক লামি কিম বলেন, এই চুক্তি অস্ত্র ব্যবসার ভিত্তি তৈরি করতে পারে এবং তাদের যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতাকে সহজতর করতে পারে।

এদিকে পুতিনের কোরিয়া সফরে অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগির শঙ্কা নিয়ে পশ্চিমা কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, এই চুক্তি ইউক্রেনে পুতিনের সেনাবাহিনীকে সহায়তা করবে এবং এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন মঙ্গলবার অভিযোগ করে বলেন, ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আগ্রাসনের যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে এমন দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বিকাশ ও জোরদার করার জন্য রাশিয়া মরিয়া হয়ে উঠেছে।

‘উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য উল্লেখযোগ্য অস্ত্র সরবরাহ করছে।

অ্যামেরিকার ছয় সিনিয়র কর্মকর্তা এনবিসি নিউজকে বলেছেন, পুতিন উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু সাবমেরিন ও ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি সরবরাহ করছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন। তারা বলেন, রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক সশস্ত্র ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে সক্ষম প্রথম সাবমেরিন স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় চূড়ান্ত পদক্ষেপ সম্পন্ন করতে সহায়তা করতে পারে, যা নিয়ে বাইডেন প্রশাসন উদ্বিগ্ন।

তবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের লঙ্ঘন হিসেবে অস্ত্র হস্তান্তরের বিষয়টি উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া উভয়েই অস্বীকার করেছে।

রাশিয়া চলতি বছরের শুরুতে নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দিয়ে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছে। অভিযোগ করা হয় যে মস্কো তদন্ত এড়িয়ে যাচ্ছে এবং কিমকে তার অস্ত্র পরীক্ষার ফলে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা থেকে রক্ষা করতে চীনের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত