Sylhet Today 24 PRINT

সিলেটে পুনর্বাসন কেন্দ্রে ‘নির্যাতনে’ আত্মহত্যার চেষ্টা ৩ কিশোরীর

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২৬ জুন, ২০২৪

সমাজসেবা মন্ত্রণালয় পরিচালতি সিলেট শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তিন কিশোরী আত্নহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাত ১০টার দিকে শিবগঞ্জ লামাপাড়া এলাকার ওই পুণর্বাসন কেন্দ্রের চার তলা ভবনের ভ্যান্টিলেটর ভেঙে কার্নিশে উঠে তিন কিশোরী লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এসময় এলাকার লোকজন তাদের উদ্ধার করেন।

এসময় ওই তিন কিশোরী জানিয়েছে, পুণর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের কারণে তারা আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলো।

উদ্ধার হওয়া তিন কিশোরীর বয়স যথাক্রমে ১৫, ১৪  ও ১৩ বছর। তাদের বাড়ি ঢাকা, কুমিল্লা ও সুনামগঞ্জে।

জানা যায়, রাতে ভবনের ভ্যান্টিলেটর ভেঙে কার্নিশে উঠে তিন কিশোরী লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাৎক্ষণিক এলাকার লোকজন ভবনের নিচে অবস্থান নেন। এসময় তাদের আত্মহত্যা না করার জন্য বুঝানো ফাঁকে আরও কিছু লোক ভবনের জানালার গ্রিল ভেঙে কার্নিশ থেকে তাদের উদ্ধার করেন।

খবর পেয়ে শাহপরাণ (রহ.) থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশের ভাষ্যমতে, ওই তিন কিশোরী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, আত্মহত্যার চেষ্টা করেনি।

সাংবাদিকদের কাছে পেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী তিন কিশোরী পুনর্বাসন কেন্দ্রে নির্যাতনের বর্ণনা দেয়। তারা জানায়, পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শরিফা বেগম, কণিকা দে এবং রাবেয়া বেগম দীর্ঘদিন ধরে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ, অশ্লীল কথাবার্তা বলেন। জামাকাপড়তো দূরে থাক, ঠিকমতো খাবার, গোসল, কাপড় কাঁচার সাবান, ব্যবহারের জন্য তেলও দেন না। যে কারণে পালাতে নয়, আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল তারা।

কিশোরীরা আরও জানায়, পুলিশ তাদের ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রে দিয়েছিল। যে কারণে নির্যাতন চালানো হয়। কারণ পুলিশ পুনর্বাসন কেন্দ্রে টাকা দেয় না। তাই নির্যাতন নিপীড়ন করা হয়। আর যাদের পরিবার থেকে কিংবা বিভিন্ন লোকজন পুনর্বাসন কেন্দ্রে দিয়ে যান, তাদের কদর করা হয়। কারণ ওই ব্যক্তি বা পরিবারের লোকেরা প্রতিষ্ঠানে টাকা পাঠায়।  

কিশোরীদের অভিযোগ, তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও কথা বলতে দেওয়া হয় না। খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না পেয়ে বড় স্যারের কাছে অভিযোগ দিলে তারা শারীরিক নির্যাতন করে। মা-বাবা তুলে গালিগালাজ করে।

এসময় এক কিশোরী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ‘আমাদের নিয়া যান, আমরা এখানে ভালো নেই। আমাদের অন্য পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন। আপনারা যাওয়ার পর শরিফা, কণিকা ও রাবেয়া ম্যাডাম আবারও নির্যাতন করবে। আমরা এমনি এমনি আত্মহত্যার চেষ্টা করিনি। আমাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়। এর চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। ’

স্থানীয়রা জানায়, কয়েকদিন পরপর এই পুনর্বাসন কেন্দ্রের কিশোরীরা আত্মাহত্যার চেষ্টা চালায়। কেউ তো এমনি এমনি আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয় না। পুনর্বাসন কেন্দ্রে কিশোরীদের মারধর ও নির্যাতনের অনেক খবর পাওয়া যায়। কয়েকদিন আগে চারজন তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। আসলে তারা পুনর্বাসন করতে চায়, নাকি নির্যাতন করে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে চায়।

এদিকে অভিযুক্ত আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

অভিযোগের ব্যাপারে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালক বাসুদেব দেবনাথ সাংবাদিকদের জানান, আমরা খবরটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়েছিলাম। তারা আসলে প্রাপ্ত বয়স্ক নয়, এই জন্য বোধশক্তি হারিয়ে এরকম কাজ করতে চেয়েছিল। তবে পুনর্বাসন কেন্দ্রে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.