নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ জুন, ২০২৪ ১৭:৪৪

আজাদের বাসায় ‘হামলার জেরে’ সাবেক ছাত্রলীগ নেতার বাসায় হামলার অভিযোগ

ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সাবেক সদস্য ছফু আহমদের বাসায় সামনে ভাংচুর কৃত গাড়ি

সিলেট সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের বাসায় হামলার জেরে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রিয় এক নেতার বাসায় হামলা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শুক্রবার দুপুরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সাবেক সদস্য ছফু আহমদের বাসায় দুর্বৃত্তরা হামলা করে বলে জানা গেছে। ছফু আহমদ প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তার বাসা নগরের টিলাগড় এলাকার শাপলাবাগে।

এরআগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সিসিক কাইন্সলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদের বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা শফিকুর রহমান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এদিকে, আজাদের বাসায় হামলার ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিভিন্ন সময়ে তাদের আটক করা হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সাবেক সদস্য ছফু আহমদ অভিযোগ করেন, শুক্রবার জুমার পর ৫০/৬০ জনের একটি দল দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তার বাড়িতে হামলা করে। হামলাকারীরা তার ঘরের জানালার গ্লাস ও বাসার সামনে থাকা গাড়ি ভাংচুর করে বলে অভিযোগ ছফুর।

কাউন্সিলর আজাদের বাসায় হামলার জেরে তার অনুসারীরাই এ হামলা জালিয়েছে বলেও অভিযোগ করে ছফু।

তবে ছফুর বাসায় হামলার আগেই পুলিশ তা প্রতিহত করেছে জানিয়ে শাহপরান থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য বলেন, কাউন্সিলরের বাসায় হামলার ঘটনায় সকাল থেকেই টিলাগড় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। শাপলাবাগে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার বাসায় কিছুসংখ্যক লোক জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়।

ইন্দনীল বলেন, কাউন্সিল আজাদের বাসায় হামলার ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত তিনজনকে আটক করেছে। বাকীদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে নগরীর ভাটাটিকর এলাকায় কাউন্সিলর আজাদের পৈত্রিক বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।

আজাদুর রহমান আজাদের অনুসারীদের দাবি, চাঁদাবাজি-দখলবাজির প্রতিবাদ করায় এ হামলা হয়েছে।

আজাদ ২০ নম্বর ওয়ার্ডের টানা পাঁচবারের কাউন্সিলর। নগরের টিলাগড় এলাকায় তার নিজস্ব একটি বলয় রয়েছে। ওই এলাকায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও  সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিত সরকারেরও বাসায়। টিলাগড় এলাকায় তাদেরও আলাদা বলয় রয়েছে।

কাউন্সিলর আজাদের অনুসারীদের অভিযোগ, শেখ নজরুল ইসলাম বিজয়, রাব্বী, রিয়াজুল, সুহেল, নাসির, সামাদসহ বেশ কয়েকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে তার পৈতৃক ভিটায় হামলা চালান। পরে নগরের পূর্ব শাপলাবাগ এলাকায় কাউন্সিলরের নিজ বাসভবনেও হামলা চালিয়ে বাসার জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়।

একই সঙ্গে রাতে আজাদের ঘনিষ্ঠ অনুসারী ও মহানগর যুবলীগের সদস্য শমশের আলীর বাসায়ও হামলা হয়েছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। খবর পেয়ে আজাদের অনুসারীরা জড়ো হলে তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন হামলাকারীরা। এতে আজাদের ভাইয়ের ছেলে তাহমিদুর রহমান এবং তার অনুসারী হীরক রঞ্জন দে পাপলু, ফয়ছল ও মুতাছির আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, আজাদুর রহমান আজাদের বাসায় হামলাকারীদের কেউ কেউ স্থানীয়ভাবে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তবে আজাদুরের বাসায় হামলার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তার অনুসারীরা জড়ো হয়ে হামলাকারীদের ধাওয়া দেয়। ধাওয়ার মুখে হামলাকারীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এরপর কয়েকজন হামলাকারীর বাসায় আজাদের অনুসারীরাও হামলার চেষ্টা চালায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর আজাদুর রহমান বলেন, ‘এলাকায় বিভিন্ন চাঁদাবাজি, হামলা-দখলবাজি চালিয়ে আসছে একটি চিহ্নিত মাদকসেবী চক্র। তাদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় আমার কাছে অভিযোগ করেছে। সেসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান ছিল। ওই ক্ষোভ থেকেই তারা হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করব।’

প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘যারা হামলা করেছেন, তারা চোর-ডাকাত; কোনো গ্রুপের (দল) নন। এ বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছি। আজাদুর রহমান আজাদের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত