হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

০১ জুলাই, ২০২৪ ২০:৩১

পঞ্চায়েতের বাধায় ঠাঁই হয়নি শ্মশানে, ২ শিশুর লাশ ভাসানো হলো নদীতে

শেষকৃত্যের জন্য একটু মাটি জুটল না পানিতে ডুবে মারা যাওয়া দুই শিশুর জন্য। গ্রাম্য মাতব্বরদের বাধায় শ্মশানে সমাধি দিতে না পেরে বস্তায় ভরে ভাসিয়ে দেওয়া হলো নদীতে।

এমন অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামে।

গত শনিবার ফুটবল খেলা শেষে পুকুরে গোসল করতে নেমে মারা যায় ওই গ্রামের দুই শিশু প্রলয় দাস (৭) ও সুর্য দাস (৬)। সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী মরদেহ দাহ করা হয়। তবে শিশুদের বেলায় তা দাহ না করে সমাধি দেওয়ার রীতি রয়েছে।

গত শনিবার (২৯ জনু) সন্ধ্যার দিকে কালনী-কুশিয়ারা বস্তায় ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে দুই শিশুর মরদেহ। এর আগে ওই দিন দুপুরে প্রলয় (৭) ও সূর্য দাস (৬) অন্য শিশুদের সঙ্গে মাহমুদপুর মাঠে ফুটবল খেলা শেষে পুকুরে গোসল করতে নামে। একপর্যায়ে দুই শিশু পা পিছলে পানিতে তলিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাৎক্ষণিক তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

প্রলয় দাসের বাবা গোবিন্দ দাস বলেন, ‘গত ২৯ জুন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আমি আমার ছেলেকে পাহাড়পুর মহাশ্মশানে দেয়াল সংলগ্ন মাটির নিচে সমাধি দেই। কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিপেশ দাস, যুগ্ম সম্পাদক নীরঞ্জন তালুকদার ও কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকারসহ গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকেরা আমাকে ডেকে লাশ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দিতে বলেন। আমি লাশ না তোলার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ উপস্থিত সবার হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলেও তারা আমার কথা শুনেননি। অবশেষে পঞ্চায়েত কমিটির চাপে বাধ্য হয়ে সন্ধ্যায় আমি ছেলের লাশ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যদি আইনের আশ্রয়ে যাই তাহলে গ্রামবাসী আমার বিরুদ্ধে চলে যাবে। আমাকে গ্রামে থাকতে দিবে না। তাই ভয়ে আইনের সহযোগিতা নেবার সাহস পাচ্ছি না।’

অপর শিশুর বাবা রুবেল দাস বলেন, ‘শ্মশানে গোবিন্দ দাসের ছেলের লাশ সমাধিতে বাধার বিষয়টি জানার পর বাধ্য হয়ে আমার ছেলে সূর্যের লাশ বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দিয়েছি।’

গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিপেশ সরকার বলেন, ‘এটি আমার একার সিদ্ধান্ত না। গ্রাম কমিটির সবার সিদ্ধান্ত ছিল।’

পঞ্চায়েতের কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকার বলেন, ‘গ্রামের কমিটির সিদ্ধান্ত হলো শ্মশানের পরিবেশ পরিষ্কার রাখার জন্য পাশে কোনো সমাধি করা যাবে না। এই সিদ্ধান্ত এলাকার সবার জন্য সমান।’

বদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুসেনজিৎ চৌধুরীর বলেন, ‘বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। ঘটনাটি অমানবিক। শ্মশান তো মানুষের সৎকারের জন্যই। এখানে সমাধিত করা হলে শ্মশানের পরিচ্ছন্নতার বিষয় কেন আসবে?’

আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ডালিম আহমেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছি। অভিযোগ পেলে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত