Sylhet Today 24 PRINT

করোনা সন্দেহে বৃদ্ধা মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন ছেলেরা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি |  ১৪ এপ্রিল, ২০২০

বাইরের জেলা থেকে আসা মানুষের বাড়িতে যাওয়ায় করোনা সন্দেহে বৃদ্ধ মাকে ঘর থেকে বের করে দিলেন ছেলেরা। যার কারণে গেল দুইদিন ধরে ঘরে বাহিরে ঘুরে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করে জীবন পার করছেন অমত্য বালা দাস নামের ওই ৯০ বছরের বৃদ্ধা।

মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) সকালে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল শাল্লা উপজেলায় এ ঘটনাটি ঘটে।

স্থানীয় সাংবাদিক জয়ন্ত সেনের ফেসবুক আইডিতে একটি ভিডিওটি পোস্ট করা হলে এ ঘটনাটি ভাইরাল হয়।

জানা যায়, শাল্লা উপজেলার হাবিবপুর ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের বাসিন্দা ৯০ বছরের এ বৃদ্ধ মহিলা। দুই ছেলের জন্মের পরেই স্বামীকে হারান তিনি। দুই ছেলে জুগেশ দাশ ও রণধীর দাশকে কষ্ট করে মানুষ করেন তিনি। দুই ছেলে কৃষি কাজ করেন। তাদের পারিবারিক অবস্থা ভালো হওয়ার পরেও দেশের অন্য জেলা থেকে শাল্লা আসা গার্মেন্টস কর্মীর বাড়িতে যাওয়ায় প্রতিবেশীদের কথায় ঘর থেকে মাকে বের করে দিলেন তার ছেলেরা। ছেলেদের দাবি, করোনার মহামারীর মধ্যে অন্য জেলা থেকে আসা মানুষের বাড়িতে যাওয়ার শাস্তিস্বরূপ তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

বৃদ্ধ মহিলা অমত্য বাল দাশ বলেন, আমার কোনও করোনা নাই বাবা। আমি কারো বাড়িতেও যাই নাই। আমি বুড়া মানুষ হাটতে বের হইছিলাম পরে ঘরে গেলে ছেলেরা আমারে মিথ্যা অপবাদ দিয়া ঘর থকি বাইর করিয়া দিসে। গাওয়ের কেউ আমারে জায়গা দেয়না, খাওন দেয় না। তারা সবাই কয় আমি নাকি করোনা রোগী। আমি না কিতা ওই এরা বাড়িতে গিয়া চা-পান খাইছি। এখন আমার ছেলেরা জায়গা দেয় না, বউরা খাওয়া দেয় না। গেলেই বলে তুমি দোষী ঘরে আইও না। এখন এক সবজি ব্যবসায়ী আমাকে একটা বেগুন দিলেও চাল কেউ দেয় নাই।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংবাদিক জয়ন্ত সেন বলেন, ওই মহিলাকে আমি রাস্তায় বসে থাকতে দেখে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি করোনা সন্দেহে ছেলেরা তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি উনার ছেলেদের কোনও অভাব অনটন নেই। তাদের পারিবারিক অবস্থা ভালো হওয়ার পরেও তার ছেলেরা ও কিছু প্রতিবেশী মিলে এমন কুসংস্কারকে বিশ্বাস করে পুরো উপজেলায় বিষয়টি ছড়িয়ে দিয়েছে। যার কারণে মহিলাটি এখন কোথাও খাবার পায় না, আমি এখন উনাকে আমার ঘরে নিয়ে এসে চারটা ডাল-ভাত খাইয়েছি।

বৃদ্ধার দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে জুগেশ দাসের সাথে কথা হলে তিনি জানান, অন্য জেলা থেকে গ্রামে আসা গার্মেন্টস কর্মীর বাড়িতে যাওয়ার কারণে মাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তিনি তার শাস্তি ভোগ করতেছেন।

শাল্লা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল-মুক্তাদির হোসেন বলেন, একজনের কাছ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি। বিষয়টি আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবগত করেছি। তিনি এখন ওই নারীর কাছে গিয়ে বিষয়টি দেখবেন। যদি বিষয়টি সত্যি হয় তাহলে আমরা ছেলেদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.